March Equinox 2022
আজ বসন্ত বিষুব বা March Equinox 2022 ! যা আপনার জানা দরকার
বিষুব হলো বছরের এমন একটি সময়, যখন দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়ে থাকে। বছরের দুইটি দিনে এরকম হয়ে থাকে। এই দিন গুলিতে সূর্য বিষুব রেখা বরাবর অবস্থান করে।
দিন দুইটি হলো –
- জলবিষুব / শারদীয় বিষুব – ২২/২৩/২৪ সেপ্টেম্বর
- মহাবিষুব / বসন্ত বিষুব – ১৯/২০/২১ মার্চ
আপনি জানেন কি ? আপনি পৃথিবীতে যেখানেই থাকুন না কেন, বিষুব আমাদের জন্য অনেকগুলি ঋতুগত প্রভাব নিয়ে আসে, যা অনেক প্রকৃতি উৎসাহীরা লক্ষ্য করেন থাকেন।
বিষুব-এ, পৃথিবীর দুটি গোলার্ধ সমানভাবে সূর্যের রশ্মি গ্রহণ করে। রাত এবং দিন প্রায়ই দৈর্ঘ্য সমান হয়ে থাকে. আসলে, ইকুইনক্স শব্দটি ল্যাটিন aequus(সমান) এবং nox (রাত) থেকে এসেছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে সময়সূচী আমাদের তুলনায় কম সুনির্দিষ্ট ছিল, তারা ভাবতো সম্ভবত দিন এবং রাত সমান । কিন্তু আমরা আজ জানি এটা ঠিক তেমন নয়।
আজ ২০ শে মার্চ বসন্ত বিষুব। আজকে পৃথিবীর দিন রাত সমান। সূর্য আজ বিষুবরেখার উপর থেকে সোজাসুজি আলো দিবে।
বছরের দ্রুততম সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় ঘটে এই দিনে । আমরা এখানে দিগন্তের নীচে সূর্য ডুবতে কতটা সময় নেয় তার কথা বলছি।
মার্চ বিষুব প্রভাব হলো , মার্চ বিষুব এর সময়ে আমরা সকলেই লক্ষ্য করতে পারি। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে, আগে সূর্যোদয় এবং পরে সূর্যাস্ত, নরম বাতাস এবং অঙ্কুরিত উদ্ভিদ নিয়ে আসে।
এদিকে বিষুবরেখার দক্ষিণে, আপনি বিপরীত ঋতু খুঁজে পাবেন এবং শীতল বাতাস, শুকনো পাতা ঝরে পড়ে তখন, উত্তর গোলার্ধের তুলনায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় পরে ।
আমরা জানি যে পৃথিবী পুরো বছর তার নিজ অক্ষের ওপর একটু কাত হয়ে ঘুরতে থাকে। যার কারণে সূর্যের আলো সমানভাবে পৃথিবীতে বণ্টন হয় না এবং দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যে তারতম্য এবং ঋতুবৈচিত্র্য দেখা যায়। পুরো বছর নিজ অক্ষের উপর ঘুরলেও বছরে এমন দুইটি দিন আসে যখন পৃথিবী তার অক্ষের ওপরে একেবারে সোজা হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সূর্যরশ্মি বিষুবরেখার ওপরে লম্বভাবে এসে পড়ে এবং দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়।
সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ এবং মার্চের ২০ তারিখ সূর্য আকাশের ঠিক পূর্ব দিক থেকে ওঠে এবং ঠিক পশ্চিম বরাবর অস্ত যায়। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময়ে তার একটু হলেও তারতম্য হয়। সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ উত্তর গোলার্ধে হয় শারদ বিষুব এবং দক্ষিণ গোলার্ধে হয় বাসন্ত বিষুব। আবার মার্চের ২০ তারিখ হল ঠিক তার বিপরীত অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে বাসন্ত বিষুব এবং দক্ষিণ গোলার্ধে শারদ বিষুব। শারদ বিষুবের পর থেকে দিনের দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে রাতের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২৩ তারিখকেই শারদ বিষুব হিসেবে ভাবা হলেও ঠিক ২৩ তারিখেই যে এটি সংঘটিত হবে তা কিন্তু নির্দিষ্ট নয়। সারাবিশ্বে ২৩ তারিখ ধরা হলেও এটি ২২, ২৩ এমনকি ২৪ তারিখেও সংঘটিত হতে পারে। এর কারণ হলো প্রতি বছরই সূর্যের অবস্থানের একটু তারতম্য হয় এবং এই সময়টি এদিক ওদিক হয়ে যেতে পারে।
শরতের শেষ দিনটিকেই জানা হয় শারদ বিষুব হিসেবে। এরপর হেমন্ত আসে এবং একটু একটু করে শীত অনুভব হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিতে এই শারদ বিষুবের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা।
ফ্রেঞ্চ রিপাবলিকান ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন ছিল এটি।
জাপানে এই দিনটিকে বলা হয় ‘শুবুন নো হি’ এবং এটিকে জাতীয় ছুটির দিন বলা হয়।
গ্রিক মিথলজি অনুযায়ী এটি হলো সেই দিন যখন দেবী পার্সিফোনি পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে তার স্বামী হেডিসের কাছে পাতালপুরিতে ফেরত যায়। এ সময়ে তারা নিরাপত্তা এবং গতবছরের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে প্রার্থনা করতো।
শারদ বিষুবের সময়ে চীনে ‘মধ্য-শরৎ’ উৎসব বা ‘চাঁদ উৎসব’ পালন করা হয়। গ্রীষ্মের ফসল হলো এই উৎসবের মূল কারণ এবং এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ‘মুন কেক’ বা ‘চাঁদের পিঠা’।
শুধুমাত্র পৃথিবী নয়, অন্যান্য গ্রহেও শারদ এবং বাসন্ত বিষুব দেখা যায়। তবে অন্য গ্রহে যেহেতু প্রাণের অস্তিত্ব নেই তাই ঋতুগুলোকে সেভাবে আলাদা করে বোঝা যায় না।
নিজের অক্ষের ওপর একটু কাত হয় ঘুরছে এমন যে কোনও ধরনের গ্রহেই বিষুব ঘটে। সবচাইতে দর্শনীয় বিষুব হলো শনি গ্রহের বিষুব। এ সময়ে শনির বলয় একপ্রকার অদৃশ্য হয়ে যায়।
সূর্য যে স্থানে আকাশ গোলকের বিষুব রেখাকে অতিক্রম করে উত্তরের দিকে এগোয়,সে স্থানটিকে বলে মহাবিষুব বা বসন্তবিষুব (ভারনাল ইকুইনোক্স)।
আর সূর্য যে স্থানে আকাশ গোলকের বিষুব রেখাকে অতিক্রম করে দক্ষিনের দিকে এগোয় তাকে বলা হয় জলবিষুব বা শারদবিষুব (অটমনাল ইকুইনোক্স)।
সূর্য বসন্তবিষুব অতিক্রম করে ২০শে মার্চ বা তার কাছাকাছি সময়ে আর শারদবিষুব অতিক্রম করে ২৩শে সেপ্টেম্ভর বা তার কাছাকাছি সময়ে।
বসন্তবিষুব পেরিয়ে সূর্য যখন উত্তরে যাত্রা শুরু করে তখন উত্তর গোলার্ধে শুরু হয় বসন্তকাল আর আমাদের শুরু হয় গ্রীস্ম।